• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কৃত্রিম বৃষ্টিতে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে ভিজলেন মেয়র আতিক বিএনপির ইতিহাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই: কাদের পুঁজিবাজারে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার ৩ বিদেশি ঋণের বেশিরভাগই সুদাসল পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে সুসংহত করতে হবে: ধর্মমন্ত্রী ঢাকার ১০ থানায় কিশোর গ্যাং বেশি: ডিএমপি কমিশনার দিনে ১০-১২ বার লোডশেডিং, গরমে অতিষ্ঠ নীলফামারীর মানুষ মালয়েশিয়া উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো গন্তব্য: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

মানবপাচার ও প্রতারণা করে ৩ কোটি টাকা হাতিয়েছে একটি চক্র

Reporter Name / ২৬৯ Time View
Update : শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে মোট ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। কয়েক বছর ধরে তারা এই কর্মকা- চালাচ্ছিল। এর মধ্যে তারা একজনকেও বিদেশে পাঠায়নি। এমনকি কাউকে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেনি। তাদের কোনো লাইসেন্সও নেই। মধ্যপ্রাচ্যের দেশে পাঠানোর কথা বলে তারা নিয়েছে ২-৩ লাখ এবং ইউরোপের দেশের জন্য নিয়েছে ৬-৭ লাখ টাকা। গত দুই বছরে বিদেশ যাওয়ার জন্য ৫২১ জন তাদের কাছে পাসপোর্ট জমা দিয়েছে। এই চক্রের টার্গেট ছিল, ওই টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার। টাকা দিয়ে বিদেশ যেতে না পারা এবং টাকা ফেরত না পাওয়া অনেক ভিকটিমের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে এই চক্রের মূলহোতাসহ দুইজনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)। আটকরা হলেন- মূলহোতা মাহবুব উল হাসান (৫০) ও তার সহযোগী মাহমুদ করিম (৩৬)। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫২১টি পাসপোর্ট, বিদেশে চাকরির জন্য তৈরি ভুয়া কোর্সের সনদ ৬৫টি, ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট ৩০০টি, ভুয়া কোভিড ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেট ২২৫টি, সৌদি, ইরাক, কুয়েত, দুবাই, রোমানিয়া, কানাডা ও কম্বোডিয়ায় চাকরির ভুয়া চুক্তিপত্র, ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট, টাকা গ্রহণ রেজিস্টার ৩টি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ১৫টি, রোমানিয়ান জাল ভিসা ৭টি, জাল কাগজপত্র তৈরির ব্যবহৃত কম্পিউটার, স্ক্যানার এবং প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ পর্যন্ত তারা বিভিন্ন অসহায় দরিদ্র লোকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রের মূলহোতা মাহবুব উল হাসান এবং তার প্রধান সহযোগী মাহমুদ করিম। তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে দালালের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে ইচ্ছুক লোকজনের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। এভাবে তারা গত দুই বছরে ৫২১টি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। বিদেশ যেতে ইচ্ছুক মানুষদের টার্গেট করে অগ্রিম অর্থ আদায় করতো চক্রটি। এর মধ্যে যারা মধ্যেপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে ২-৩ লাখ টাকা করে এবং যারা ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে ৬-৭ লাখ টাকা করে জমা নেয়। এরপর বিভিন্ন কোম্পানির নামে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র, ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে তাদেরকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করে। কিন্তু পরে বিদেশে যাওয়ার কোনো কার্যক্রম না দেখে টাকা ফেরতের জন্য তাগাদা দিলেও তারা কোনো ভিকটিমকে টাকা ফেরত দেয়নি। র‌্যাব-৩ এর সিও বলেন, গত দুই বছরে পাসপোর্ট এবং অর্থ জমাদানকারী কোনো ভিকটিমকে তিনি বিদেশে পাঠাতে পারেননি। এরপরও তিনি নিয়মিতভাবে দালালদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার মানুষজনের কাছ থেকে বিদেশে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছেন। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে সংগ্রহকৃত অর্থের পরিমান বৃদ্ধি পেলে অর্থসহ গ্রেপ্তার দুইজন বিদেশে পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা করেছিল। মাহবুব এখন পর্যন্ত বিদেশে পাঠানোর কোন এজেন্সির কাছে সংগ্রহ করা কোন পাসপোর্ট জমা দেননি এবং অর্থ জমাদানকারী ভিকটিমদের বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে কোনো কার্যক্রম চালাননি। গ্রেপ্তার মাহবুব ২০০০ সাল থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যেপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতারণার মাধ্যমে কিছু লোক পাঠান। তাদের প্রলোভনে পড়ে ভিকটিম এবং তাদের অভিভাবকরা রাজি হলে প্রথমে তারা পাসপোর্ট এবং প্রাথমিক খরচ বাবদ ১-২ লাখ টাকা নেন। তারপর ভিকটিমদেরকে বিদেশ থেকে তাদের বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে ফোন দিয়ে তাদেরকে আশ্বস্ত করেন, মাহবুবের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে তারা খুব ভাল আছে এবং অনেক অর্থ উপার্জন করছেন। বিদেশ থেকে ফোন পেয়ে ভিকটিমরা আরো অধিক আগ্রহী হন। এ সুযোগে চক্রটি ভিকটিমদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে টাকা আত্মসাৎ করতে থাকে। অন্যদিকে, গ্রেপ্তাররা ফ্লাইটের আগে ভিকটিমের পাসপোর্ট, ভিসা কিংবা টিকেট কোনো কিছুই হস্তান্তর করে না। কখনো কখনো মাহবুব প্রতারণার মাধ্যমে ভিকটিমদেরকে কাজের বদলে ভ্রমণ ভিসায় বিদেশে পাঠিয়ে থাকে। সেখানে গিয়ে চক্রের সদস্যদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা ছাড়া ভিকটিমের কিছুই করার থাকে না। বিদেশে পৌঁছার পর সেখানকার এজেন্টের মাধ্যমে আবারো প্রতারিত হতে হয় ভিকটিমদের। তাদেরকে কাজের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। এরপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ সময়ে মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে ভিকটিমদের অপেক্ষা করতে বলে। সে জানায় কিছুদিন পরে কোম্পানি চালু হবে। তখন তারা বেতন ও কাজের সুযোগ পাবেন। এ সময়ে ভিকটিমরা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকে নিজেদের চেষ্টায় টিকিট জোগাড় করে দেশে আসার চেষ্টা করেন। এরপর ভিকটিম দেশে ফিরে এলে মাহবুব অভিভাবক এবং ভিকটিমদের উল্টো দোষারোপ করেন। এভাবে করোনার আগ পর্যন্তু মালয়েশিয়া, দুবাই এবং সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে ভিকটিমদের পাঠিয়ে প্রতারিত করে তাদের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মাহবুব। র‌্যাব-৩ এর সিও বলেন, গ্রেপ্তারদের ট্রাভেল এজেন্সি বা রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনার কোনো লাইসেন্স নেই। স্বল্প সময়ে, বিনাশ্রমে অধিক লাভ বা অর্থ উপার্জনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। ভিকটিমরা বিদেশ গিয়ে কোনো কাজ না পেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের কোনো অনুশোচনা নেই। গ্রেপ্তার মাহবুব উল হাসান এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করে ১৯৯৩ সালে মালয়েশিয়ায় যান। ৫ বছর পর দেশে ফিরে কৃষি কাজ শুরু করেন। স্বল্প পরিশ্রমে অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় অবৈধভাবে ২০০০ সাল থেকে এক এজেন্সির মাধ্যমে মধ্যেপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানো শুরু করেন তিনি। ওই এজেন্সি থেকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় ২০১৪ সালে আরেকটি এজেন্সির মাধ্যমে কাজ শুরু করেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তার পাঠানো প্রত্যেকেই বিদেশে গিয়ে কাজ না পেয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। এরপর কোনো ট্রাভেল এজেন্সির সাহায্য ছাড়াই কোটিপতি হওয়ার আশায় নিজেই অবৈধভাবে একটি অফিস খুলে মিথ্যা প্রলোভন ও প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category