বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী

- আপডেট সময়ঃ ০৪:২০:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩
- / ১৪২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৯ সাল থেকে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিকভাবে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) আয়োজিত ‘নিউ ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি ইন স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আওয়মী লীগ সরকারের আমলে দেশ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ২০০৯-২০২৩ মেয়াদে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে মাথাপিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৫৪৩ মার্কিন ডলার। দারিদ্র্যের হার প্রায় ৪১.৫ শতাংশ থেকে প্রায় ১৮.৭ শতাংশে নেমে এসেছে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.৫ শতাংশে থেকে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার পর যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিল, তারা দেশের মানুষের উন্নয়নে কিছুই করেনি। গণতন্ত্র ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বাড়ি বিতরণের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশে একজন মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য ও জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও চাপ সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনা অবশ্য বলেন যে তার সরকার এ চাপ কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়তে ভিশন থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়য়ামী লীগ ২০২১ সালের রূপকল্প ঘোষণা করেছিল এবং সেই রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট জাঁতি হিসেবে গড়ে তুলতে তার সরকার রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম মানবতাকে আঘাত করে বা ক্ষুণœ করে এমন কাজে ব্যবহার না করার বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সরঞ্জাম যেন আমাদের মানবতাকে আঘাত বা ক্ষুণœ করে এমন কাজে নিয়োজিত করা না হয়। অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যলেখক মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, চুতুর্থ শিল্পবিপ্লব যাতে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি না করে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার ওপর প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, ৪আইআর আমাদের সমাজের মধ্যে আরও বিভাজন তৈরি করবে না। এ উদ্দেশ্যে আমাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে হবে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশের তরুণদের ৪আইআর ও ভবিষ্যৎ কাজের জন্য তৈরি করতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের ছেলেমেয়েরা শুধু ৪আইআরকে শুধু অনুসরণ করবে না বরং প্রকৃতপক্ষে এর নেতৃত্ব দেবে। দেশের শিক্ষার্থীরা রোবোটিক্সে যে ধরনের উদ্ভাবনী কাজ করছে, তা দেখে তিনি উৎসাহবোধ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারাদেশে যে উদ্ভাবন মেলার আয়োজন করে আসছি, সেখানেও তাদের মধ্যে দারুণ উৎসাহ দেখেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই ডব্লিউইএফের সঙ্গে অংশীদারত্বে একটি স্বাধীন ৪আইআর কেন্দ্রকে স্বাগত জানাবে। সরকার এরইমধ্যে বাংলাদেশে ৪আইআরের জন্য যথাযথ আইন, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, ন্যানোটেকনোলজি ইত্যাদি বিষয়ে পৃথক জাতীয় কর্মকৌশল তৈরি করেছি। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজি এবং অন্যান্য বিষয়ে বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট স্থাপন করছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্মার্ট গভর্ন্যান্সের জন্য ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেতাদের বিকাশের জন্য আমরা স্মার্ট লিডারশিপ একাডেমিও চালু করেছি। তাই বাংলাদেশ একটি গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট তৈরির বিষয়ে জাতিসংঘের কাজে আগ্রহী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা আশা করি যে, এ গ্লোবাল কমপ্যাক্টে ডিজিটাল ও সীমান্তপ্রযুক্তির দায়িত্বশীল ও উৎপাদনশীল ব্যবহারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে। তিনি সাইবার-আক্রমণ, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও অন্যান্য অপকর্মের বিরুদ্ধে সুরক্ষাব্যবস্থা রাখার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আমাদের সম্মিলিতভাবে সাইবার-আক্রমণ, বিভ্রান্তমূলক তথ্য ও অন্যান্য অপকর্মের বিরুদ্ধে সুরক্ষাব্যবস্থা রাখতে হবে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি ব্লেন্ডেড শিক্ষার অপার সম্ভাবনার বিষয়ে সরকারের চোখ খুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা মহামারির সময়ে দেশব্যাপী ডিজিটাল কাঠামোর সম্পূর্ণ সুবিধা গ্রহণ করেছি। আমরা শিক্ষাব্যবস্থাকে অনলাইনে চালু করেছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাজ কমবেশি নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকার সারাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে দৈনিক লেকচার সেশন সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে সংসদ টিভি চ্যানেলকে একটি শিক্ষা চ্যানেলে পরিণত করেছে। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, সরকার সব পাঠ্যপুস্তক অনলাইনে আপলোড করে বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এটি শিক্ষার বিষয়বস্তু এবং মডেল ক্লাস লেকচার আপলোড করার জন্য ‘মুক্তপথ’ নামে একটি অ্যাপ চালু করেছে। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষকদের অনলাইন শিক্ষার পদ্ধতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের অভিযোজন করার ব্যবস্থা করেছি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যথাযথ পরিবর্তন আনার জন্য শিক্ষক ও প্রশাসকদের পরামর্শ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গঠনমূলক চিন্তাভাবনা ও সৃজনশীলতার ওপর জোর দিতে সরকার এখন দেশের স্কুল পাঠ্যক্রমকে নতুন করে সাজিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা তাদের মুখস্থবিদ্যা রপ্ত করার পরিবর্তে নিজেরাই যেন চিন্তা করতে এবং কাজ করতে পারে সে বিষয়ে উৎসাহিত করছি। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সামাজিক এবং বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা দিয়ে গড়ে তোলার আশা করি, যাতে তাদের বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করতে পারি।
বিশ্বের সব শিশুর টিকাদান নিশ্চিত করার আহ্বান শেখ হাসিনার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী সব শিশুকে মারাত্মক সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষার জন্য টিকাদান নিশ্চিত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে ১৩-১৫ জুন অনুষ্ঠিত জিএভিআই’র ‘গ্লোবাল ভ্যাকসিন ইমপ্যাক্ট কনফারেন্স: রেইজিং জেনারেশন ইমিউনিটি’-তে একটি ভিডিওবার্তায় এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী সব শিশু যাতে মারাত্মক সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের টিকা পায় তা নিশ্চিত করতে আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। টিকাকে বিশ্বের শিশুদের জন্য একটি সুন্দর উপহার উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি ‘জেনারেশন ইমিউনিটি’ বাড়ানোর লক্ষ্যে এ সম্মেলনে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন তৈরি ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করতে জিএভিআই’র এ সহায়তাকে চমৎকারভাবে ব্যবহার করে বাংলাদেশ প্রাথমিক টিকাদানের কভারেজ ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত সম্প্রসারণ করেছে। আমাদের ভ্যাকসিন পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনীর একটি প্রশিক্ষিত পুল রয়েছে- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ পরিমাণের প্রায় ৮০ শতাংশ তহবিল হাম, পোলিও ও নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে নতুন ভ্যাকসিনের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রতি বছর একটি জাতীয় টিকা দিবস পালন করে। আমাদের সরকার ন্যায় ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে জাতীয় টিকানীতি প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশ ও জিএভিআইর মধ্যে ২০০১ সালে শুরু হওয়া অংশীদারত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিএভিআই’র সহায়তায় বাংলাদেশ এখন জরায়ুর ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এইচপিভি ভ্যাকসিন চালু করেছে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা কলেরা ভ্যাকসিন নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছি এবং আমাদের অভিজ্ঞতা অন্যন্য দেশে পৌঁছে দিয়েছি। কোভিড-১৯ চলাকালে প্রধানমন্ত্রী কোভিড ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক জনসাধারণের পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি আশা করি নতুন আন্তর্জাতিক মহামারি চুক্তি সেই আহ্বানকে প্রতিফলিত করবে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা আমাদের স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পকে সাশ্রয়ীমূল্যে কার্যকর মহামারি ভ্যাকসিনের বিকাশ ও উৎপাদন করতে সহায়তা করছি। তিনি বলেন, আমরা টিকা উদ্ভাবনের বিষয়ে জিএভিআই’র সাথে অংশীদারী করতে প্রস্তুত আছি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্য জিএভিআই’র সহায়তার কথা স্মরণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ২০০৯ ও ২০১২ সালে জিএভিআই অ্যালায়েন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বলে তিনি গর্বিত। তিনি আরও বলেন, আমি ২০১৯ সালে জিএভিআই’র ‘ভ্যাকসিন হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়াকে সম্মানের বিষয় বলে মনে করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে- আমাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য আমাদের দেশকে নিরাপদ, টেকসই ও সমৃদ্ধ করা। তিনি আশা করেন, জিএভিআই টিকা-প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে শিশুদের বাঁচাতে বাংলাদেশের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে। প্রধানমন্ত্রী এ গ্লোবাল ভ্যাকসিন ইমপ্যাক্ট কনফারেন্স আয়োজনের জন্য স্পেন সরকার ও জিএভিআইকে ধন্যবাদ জানান। গ্লোবাল ভ্যাকসিন ইমপ্যাক্ট কনফারেন্স জিএভিআই’র বর্তমান কৌশলগত সময়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। স্পেন সরকারের সহ-আয়োজনে আয়োজিত এ বৈঠক থেকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সুযোগ গ্রহণের জন্য টিকা প্রতিরোধযোগ্য রোগগুলোর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের অগ্রগতি ও কৌশল বিকাশের জন্য বিশ্ব নেতাদের এবং টিকাদান বিশেষজ্ঞদের আহ্বান জানানো হবে। সম্মেলনের থিম ‘জেনারেশন ইমিউনিটি বৃদ্ধি’ ২০০০ সাল থেকে সম্ভাব্য মারাত্মক সংক্রামক রোগ থেকে শিশুদের পুরো প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের অর্জন উদযাপন করে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে হবে: শেখ হাসিনা
গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন হবে যথাসময়ে, জনগণ তাদের ভোট দেবে। ভোটের একমাত্র মালিক হিসেবে জনগণ যাকে ইচ্ছে তাকে ভোট দেবে। জনগণের ভোটে বিজয়ীরা সরকার গঠন করবে। এটা গণতান্ত্রিক ধারা এবং তা অব্যাহত থাকবে। জেনেভায় হোটেল হিলটনে স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুইজারল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি এটা ভাল করেই জানে যে তাদের খারাপ কর্মকা-ের জন্য জনগণের কোন ভোট পাবে না এবং সে কারণে তারা এখন নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে পিছু হটার বাহানা খুঁজছে। আসলে তারা (বিএনপি) চোরের ও ভোট কারচুপিকারীদের দল। ভোট ডাকাতি করা ছাড়া তাদের পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব না। শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে তারা (বিএনপি) দেশের সম্পদ বিক্রি করার পূর্বশর্ত মেনে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল। জনগণ তাদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সে কারণেই বিএনপি জনগণের ভোট পায় না। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের জন্য বিএনপির বারবার হুমকি প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, সরকার এতটা দুর্বল নয়। ১০ ডিসেম্বর নিয়ে হৈচৈ ছিল, তারা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবে, আমরা এতোটা দুর্বল পর্যায়ে নেই যে তারা আমাদের পতন ঘটাবে। আমাদের সঙ্গে জনগণ আছে, আমাদের শক্তি আমাদের জনগণ। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন বিষয়ে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি, কিন্তু বিএনপি এখনো তত্ত্ববাবধায়ক সরকারের দাবি করছে। বিএনপি কি পাগল নাকি শিশু হয়ে গেল- এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার খালেদা জিয়া দাবি করেছিলেন, পাগল বা শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। চোর, স্বাধীনতাবিরোধী ও খুনিদের ক্ষমতায় এনে আমরা বাংলাদেশকে অন্যের কাছে মাথা নত হতে দেবো না। বিএনপি এখন নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে, নোংরা কৌশল অবলম্বন করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা দিবালোকে মানুষ হত্যা করেছে, লুটপাট-দুর্নীতি করেছে, দুর্নীতির মামলায় দ-িত হয়েছে, এটাই এখন মূল ইস্যু যে তারা দ-িত ব্যক্তির নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে কি না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা আমাদের আন্দোলনের ফসল। এজন্য আমার দলের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছেন। আর আমি গ্রেনেড হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার সুফল তুলে ধরে তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ বদলেছে, আজ দেশ উন্নত হয়েছে, আজ বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ যে মর্যাদা পেয়েছে তা নিয়েই এগিয়ে যাবে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। দেশের যে কোনো সংকটে প্রবাসীদের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখে। তিনি প্রবাসীদের হুন্ডির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে বৈধ মাধ্যমে টাকা পাঠানোর আহ্বান জানান। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা বিদেশে যেতে আগ্রহীদের দালালদের সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এবং নিবন্ধনের মাধ্যমে বৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার আহ্বান জানান। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।