এই সুযোগে মেরুদণ্ড ভেঙে দেন জামায়াত-শিবিরের: ইনু

- আপডেট সময়ঃ ০৬:০৩:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৩৩ বার পড়া হয়েছে
চব্বিশের গণআন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক মন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ইনুকে এ মামলায় প্রডাকশন ওয়ারেন্টে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালে বৃহস্পতিবার প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। এ সময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ায় সাতজনকে হত্যা করা হয়। সেইসঙ্গে আহত হন বেশ কয়েকজন। সে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রসিকিউশনে জমা দিয়েছে।
অন্যদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসানুল হক ইনুর দুটি ফোন কথোপকথন রেকর্ড বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ উপস্থাপন করা হয়। রেকর্ডে দেখা যায়, তারা আন্দোলন মোকাবিলায় বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চলা ওই মামলায় উপস্থাপিত সেই কল রেকর্ডে শোনা যায়-
হাসানুল হক ইনু: হ্যালো, জি জি স্লামালাইকুম।
শেখ হাসিনা: হ্যাঁ, ওয়ালাইকুমস্লাম, কী হইছে?
হাসানুল হক ইনু: বলছিলাম… না একটা কথা… আমি মনে করি যে আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে। এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট বাংলাদেশে পাচ্ছি আরকি। খালি ঢাকাতে আপনার রামপুরার দিকে এবং…।
শেখ হাসিনা: না রামপুরা ক্লিয়ার, শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখন আছে…।
হাসানুল হক ইনু: শনির আখড়ায় কিছু মোল্লারাই…।
শেখ হাসিনা: হ্যাঁ জানি, না খালি মোল্লা না, ওইখানে অনেক মাদ্রাসা।
হাসানুল হক ইনু: মাদ্রাসা আছে ওই…।
শেখ হাসিনা: … ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে… মাইকিং করতে হচ্ছে আরকি… নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দিচ্ছে না আর্মিকে, আমরা… নামাচ্ছি।
হাসানুল হক ইনু: ও আচ্ছা…।
শেখ হাসিনা: না, আমি বলছি ক্যাজুয়াল্টির দরকার নাই। ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো, ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে, তখন দুপাশ দিয়ে ধরবে… মেসেজটা দিয়ে দিতে পারেন যে… সেনা পাঠানো হচ্ছে… আর হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে… র্যাবের হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর দিয়ে মারবে।
হাসানুল হক ইনু: আচ্ছা ওপর দিয়ে সাউন্ড বোম যাবে আরকি, ঠিকাছে… আমি একটা পয়েন্ট আপনাকে একটু নজরে আনার জন্য রিকোয়েস্ট করতেছি যে, কারফিউ ধরেন দুই-পাঁচ দিন যা চলল, চলল; কিন্তু কারফিউয়ের পর যেন আর মিছিল না নামতে পারে সেজন্য একট হোমওয়ার্ক করতে, করা দরকার যেরকম আমি উত্তরা, বাড্ডা, গুলশান, যাত্রাবাড়ীতে যারা মিছিল লিড করছে সেইগুলা চিহ্নিত আরকি… ছাত্রদল, বিএনপির ছেলে-মেয়ে, ছেলেরা, শিবিরের… মানে ধরেন রিজভীকে এরেস্ট করা বা রুহুলকে এরেস্ট করা ইম্পর্টেন্ট না, ইম্পর্টেন্ট হচ্ছে ওইখানে গ্রাউন্ডে যে মিছিলটা লিড করেছে, আমি কুষ্টিয়া জেলাতে, ওখানে এসপি সেভাবে অলরেডি তালিকা করে ফেলছে। ওখানে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। একটা ছররা গুলি খালি একজনের পায়ে লাগছে, উনি ম্যানেজ করছে। ম্যানেজ করছে। উনি অলরেডি কম্পিউটারে ছবি দেখে দেখে ছেলেগুলার তালিকা করছে। তা আমি বললাম যে ছেলেগুলাকে আজকে রাত্রের ভেতরে পিকআপ করে নাও।
শেখ হাসিনা: হ্যাঁ শিওর।
হাসানুল হক ইনু: যেন মিছিলটা লিড না করতে পারে। তা আমি ঢাকা শহরের জন্য বলছি যে আপনার গোয়েন্দারা নিশ্চয়ই তালিকা করতে পারবে যে উত্তরায় কারা।
শেখ হাসিনা: … খালি গোয়েন্দারটা না, লোকাল লিডারদেরও করা উচিত।
হাসানুল হক ইনু: লোকাল লিডার ওইখানে এমপি খসরু ও হাসান হাবিব আছে। আমার কালকের যে রিপোর্ট তা হাসান হাবিবের কিন্তু ও রাগ করে খসরুর ওপর ছেড়ে দিছে যে এমপি সাহেব মোকাবিলা করুক…।
শেখ হাসিনা: খসরু তো পারবে না, খসরু তো লোকাল না, হাসান তো লোকাল, ওদের তো লোকজন আছে।
হাসানুল হক ইনু: লোকাল না তো। রাইট, হাসান হাবিব নামেনি। আর এখানে ওয়াকিলও সামলাইতে পারেনি, ও দুই লাইনে পা দিয়ে চলে। তো আমার কথা হচ্ছে যে একটু লোকাল লিডারদের সাহায্যে তালিকাটা করে নিয়ে আজকের রাত্রের ভেতরে সব কাস্টডিতে নিতে পারেন তাহলে কোনো জায়গায়… আর মোহাম্মদপুরে একটা পাঁয়তারা ছিল। কালকে আপনি রাত ১২ টায় যেয়ে খুব ভালো করছেন। আজ কিন্তু গণভবন ঘেরাও করতো। কিন্তু মোহাম্মদপুরে ওইখান থেকে রেডি হচ্ছিল কালকে, মানে এইটা, সুতরাং…।
শেখ হাসিনা: হ্যাঁ, এইটা কয়েক দিন ধরে করছে।
হাসানুল হক ইনু: ডিসিশনটা খুবই কারেক্ট হইছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা: থ্যাংকিউ, থ্যাংকিউ… আমরা হলাম রণক্ষেত্রের সাথী।
হাসানুল হক ইনু: রণক্ষেত্রের সাথী। তা আপনি একটু দয়া করে…এই পিকআপটা করতে বলেন…।
শেখ হাসিনা: না এইটা বলা আছে, বলতেছি, বলতেছি।
হাসানুল হক ইনু: ওইটা একটু হোমওয়ার্ক করতে বলেন, করে এরেস্ট করে ফেলতে বলেন আজকে। মানে সবাইকে এরেস্ট করে ফেললে আর মিছিল করার লোক থাকবে না।
শেখ হাসিনা: লিসেন, দাঁড়ান, দাঁড়ান। এরেস্ট করে…।
হাসানুল হক ইনু: আরেকটা রিকোয়েস্ট আমার যে ইন্টারনেট আমার মনে হয় চালু করতে পারেন, এটা আমাদেরই কাজে লাগবে।
শেখ হাসিনা: ভাই কি যে চালু করব সব তো পোড়াই দিছে। ডাটা সেন্টারও পোড়ায় দিছে। এখন ওই নতুন তারতুর কিনে জোড়া লাগাতে হবে।
হাসানুল হক ইনু: … আমি যে কথাটা বলার চেষ্টা… আমি একাত্তরে রাত আটটার সময় যাব একা কথা বলব। আমি বলব যে, সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীর কোনো বিরোধ নাই। সরকারের সঙ্গে বিরোধ হচ্ছে নাশকতাকারী বিএনপি-জামায়াতের।
শেখ হাসিনা : না ওইটা তো বলা হয়েছে। ওইটা আমি নিজেও বলছি…।
হাসানুল হক ইনু: … এই জিনিসটা প্রোপাগান্ডায় আনতে হবে যদি ইন্টারনেট থাকে, গণমাধ্যম দিয়ে আমরা পুরা নিউজে ফ্লাড করে দিলাম…।
শেখ হাসিনা: ইন্টারনেট পাবো কোথায়? ইন্টারনেট পোড়ায় দিছে। জীবনে… আমি তো আর আনবো না, যদি অন্য সরকার আসে তাহলে আনবে… আমি দিছি ইন্টারনেট, ওরা পোড়াইতে থাকুক, ওইটা চলতে হবে…
হাসানুল হক ইনু: অন্য সরকার, বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ অন্য সরকার আসবে না।
শেখ হাসিনা: আসুক….না আমি আর পারবো না… যাচ্ছি এখন।
হাসানুল হক ইনু: না না… যাওয়ার দরকার নাই।
শেখ হাসিনা: জামায়াত শায়েস্তা করে ধুয়ে যেতে হবে।
হাসানুল হক ইনু: …।
শেখ হাসিনা: … আপনার যেখানে যেখানে লোক আছে তালিকাগুলো আপনারা করান, আমরাও করাচ্ছি।
হাসানুল হক ইনু: …আপনি এই… জামায়াত শিবিরের মেরুদণ্ডটা আবার ভেঙে দেন ঢাকা শহরে।
শেখ হাসিনা: একেবারে…।
হাসানুল হক ইনু: … এক্সপোজ হইছে আরকি, একটু দেখেন, আর আমি বাদবাকি আমাকে যেটা বলবেন আমি ইনশাআল্লাহ করব, কোনো অসুবিধা নাই।
শেখ হাসিনা: না ওই তালিকাগুলো একটু করায় ফালান…এই ইস্যুতে যা পারেন, শিবির যে কয়টা আছে, যা আছে সব বের করেন…।
হাসানুল হক ইনু: বুঝছি আমি বুঝছি। জি স্লামুয়ালাইকুম
শেখ হাসিনা: ঠিকাছে আচ্ছা।
হাসানুল হক ইনু: জি স্লামুয়ালাইকুম
শেখ হাসিনা: থ্যাংকিউ, থ্যাংকিউ…।