রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা, মোড়ে মোড়ে তল্লাশি
- আপডেট সময়ঃ ০৪:২৭:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৯ বার পড়া হয়েছে
কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ ঘোষিত ১৩ নভেম্বরের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য সৃষ্টির যেকোনো অপচেষ্টা রুখতে কঠোর অবস্থানে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং অনলাইনে প্ররোচণামূলক প্রচারণাকে মাথায় নিয়ে পুলিশ বলছে-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে তারা প্রস্তুত। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্যের কোনো অপচেষ্টা বরদাশত করা হবে না।
রাজধানীতে ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির মঙ্গলবারের বৈঠকেও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির বরাতে বলা হয়েছে, কয়েকদিন ধরে রাজধানী ও বিভিন্ন স্থানে ঘটমান ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে সেনসেটিভ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০২৪ সালের আগস্টের আন্দোলনের সময় সংঘটিত ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়’ ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় কবে হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার তা নির্ধারণ করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
২৩ অক্টোবর বিষয়টি জানানোর পর থেকেই ঢাকাসহ কিছু জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে জনমনে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ১৩ নভেম্বর নিয়ে কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা নেই।
গতকাল মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, গত ১১ দিনে ১৫ স্থানে মোট ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এবং গত দুই দিনে ৯টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা পাওয়া গেছে। নাশকতার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ বলছে, এসব ঘটনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘১৩ নভেম্বর নিয়ে কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা নেই। ঢাকাবাসী, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশসহ সবাই মিলে এটাকে মোকাবিলা করা হবে। নাশকতা করার সম্ভাব্য এমন কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আইন অনুযায়ী আটক করা হবে।’
বুধবার মিরপুরে দিনেদুপুরে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
সাজ্জাত আলী বলেন, কিছু দিন ধরেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার ছড়িয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টায় লিপ্ত। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সম্প্রতি তাদের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীতে জড়ো হয়ে ঝটিকা মিছিলের আয়োজন করছে এবং ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির এই হীন অপতৎপরতা রোধে সচেষ্ট রয়েছে এবং ১ অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত মোট ৫৫২ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের অধিকাংশই ঢাকার বাইরে থেকে আসা এবং বিভিন্ন ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে নাশকতারীদের সনাক্ত করার কাজ চলছে।
নগরবাসীকে কোনো আগন্তুককে আশ্রয় দেওয়ার আগে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া এবং হোটেল, গেস্ট হাউজে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে অতিথি ওঠানোর অনুরোধ করেন ডিএমপি কমিশনার। এছাড়া ব্যক্তিগত ও যেকোনো ধরনের বাণিজ্যিক যানবাহন যেন কোনো অবস্থাতে অরক্ষিত না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ করেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নগরবাসীর ভূমিকার গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানে আমরা স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছি। নাশকতার পরিকল্পনাকারীদের একইভাবে সবাই মিলে প্রতিহত করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা কোর কমিটির বৈঠকও সন্দেহজনক গতিবিধি, অনলাইন প্ররোচণায় নজরদারি ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সহ্য করা হবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে জোর দিয়ে বলেছেন, ‘১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সতর্ক রয়েছে। জনমনে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সরকারি কড়াকড়ি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ও ঘিরে থাকা এলাকায় অতিরিক্ত চেকপোস্ট, নাম-ঠিকানা যাচাই, সিসিটিভি মনিটরিং এবং সন্দেহজনক যানবাহন-সমাগমে বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে রাজধানীতে ১২ প্লাটুন এবং গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে এক প্লাটুন করে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনীও।
১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ধর্মভিত্তিক আটটি দলও।























