ঢাকা, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

হল থেকে পড়ে রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় মেডিকেলে হামলা তদন্তে কমিটি

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ১০:১৩:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২
  • / ১৩৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হল থেকে পড়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জেরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠনের পর রাবি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যান। আর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইমরান হোসেন। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রামেককে নিরাপদ মনে না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কাজে যোগ দেবো না। এর আগে চিকিৎসকের অবহেলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহরিয়ারের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রামেকে ভাঙচুর চালান রাবির শিক্ষার্থীরা। ওই সময় রামেকের বেশ কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনার পর গত বুধবার রাত ১০টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত রামেকের কোনো ইন্টার্ন চিকিৎসক কাজে যোগ দেননি। কাজে না ফেরা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের নেতা ইমরান দাবি করেন, তারা অনেকসময় জীবন বাজি রেখে চিকিৎসাসেবা দেন। তারপরও তাদের ওপর কেন এই হামলা? এ হামলা যে ভবিষ্যতে আর হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত এ হামলার সুষ্ঠু বিচার না হবে ততক্ষণ তারা কর্মবিরতি পালন করবেন।এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়েছে। রোগীরা হঠাৎ করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এর আগে, গত বুধবার রাতের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাত ১১টার দিকে রামেক হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রশাসন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে যৌথ সমঝোতা বৈঠকে বসেন।প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক শেষে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করতে রামেকের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলীকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে চিকিৎসকদের দুইজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন এবং পুলিশ প্রশাসনের দুইজনকে সদস্য করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি ঘটনার অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে বলে জানানো হয়েছে। কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। গত বুধবার রাত আটটার দিকে চারতলা বিশিষ্ট হলের তৃতীয় ব্লকের তিনতলার বারান্দা থেকে পড়ে শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার মৃত্যু হয়। নিহত শাহরিয়ার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়। তিনি শহীদ হবিবুর রহমান হলের ৩৫৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। শাহরিয়ারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক লাঞ্ছিত হন বলে অভিযোগ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি, সময়মতো আইসিইউ না পাওয়ায় এবং চিকিৎসা অবহেলায় শাহরিয়ারের মৃত্যুর অভিযোগ এনে প্রতিবাদ করায় চার শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মচারীরা। তাদের মহানগরীর বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদিকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাত সাড়ে নয়টা থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠে হাসপাতালের পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়ে জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ এনে ইন্টার্ন চিকিৎসরা চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে হাসপাতাল থেকে চলে যান।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

হল থেকে পড়ে রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় মেডিকেলে হামলা তদন্তে কমিটি

আপডেট সময়ঃ ১০:১৩:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হল থেকে পড়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জেরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠনের পর রাবি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যান। আর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইমরান হোসেন। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রামেককে নিরাপদ মনে না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কাজে যোগ দেবো না। এর আগে চিকিৎসকের অবহেলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহরিয়ারের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রামেকে ভাঙচুর চালান রাবির শিক্ষার্থীরা। ওই সময় রামেকের বেশ কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনার পর গত বুধবার রাত ১০টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত রামেকের কোনো ইন্টার্ন চিকিৎসক কাজে যোগ দেননি। কাজে না ফেরা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের নেতা ইমরান দাবি করেন, তারা অনেকসময় জীবন বাজি রেখে চিকিৎসাসেবা দেন। তারপরও তাদের ওপর কেন এই হামলা? এ হামলা যে ভবিষ্যতে আর হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত এ হামলার সুষ্ঠু বিচার না হবে ততক্ষণ তারা কর্মবিরতি পালন করবেন।এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়েছে। রোগীরা হঠাৎ করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এর আগে, গত বুধবার রাতের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাত ১১টার দিকে রামেক হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রশাসন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে যৌথ সমঝোতা বৈঠকে বসেন।প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক শেষে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করতে রামেকের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলীকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে চিকিৎসকদের দুইজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন এবং পুলিশ প্রশাসনের দুইজনকে সদস্য করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি ঘটনার অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে বলে জানানো হয়েছে। কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। গত বুধবার রাত আটটার দিকে চারতলা বিশিষ্ট হলের তৃতীয় ব্লকের তিনতলার বারান্দা থেকে পড়ে শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার মৃত্যু হয়। নিহত শাহরিয়ার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়। তিনি শহীদ হবিবুর রহমান হলের ৩৫৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। শাহরিয়ারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক লাঞ্ছিত হন বলে অভিযোগ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি, সময়মতো আইসিইউ না পাওয়ায় এবং চিকিৎসা অবহেলায় শাহরিয়ারের মৃত্যুর অভিযোগ এনে প্রতিবাদ করায় চার শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মচারীরা। তাদের মহানগরীর বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদিকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাত সাড়ে নয়টা থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠে হাসপাতালের পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়ে জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ এনে ইন্টার্ন চিকিৎসরা চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে হাসপাতাল থেকে চলে যান।