ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

মন্ত্রী-এমপিদের প্লট দিতে গিয়ে রাজউক ক্ষতি করে ফেলেছে: পরিবেশ উপদেষ্টা

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৭:০৪:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, মন্ত্রী-এমপিসহ তথাকথিত ক্ষমতাবানদের প্লট দিতে গিয়ে রাজউক ক্ষতি করে ফেলেছে। বন কেটে প্লট করা হয়েছে। যখন রাজউক ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান করে, তখন ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থে সেটির বিরোধিতা করেছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংকের ‘একটি টেকসই জীবন: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর তাপের প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, বাড়তে থাকা তাপমাত্রা এখন আর কোনো তাত্ত্বিক বিষয় নয়, বরং বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের বাস্তব অভিজ্ঞতা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি একটি বৈশ্বিক ঘটনা হলেও এর প্রভাব বাংলাদেশে অনেক বেশি তীব্র, যা আমাদের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তিনি বলেন, কেবল গবেষণা প্রতিবেদনে সীমাবদ্ধ না থেকে সুপারিশগুলোকে সময়সীমাবদ্ধ কর্মপরিকল্পনায় রূপ দিতে হবে। প্রতিটি সংস্থাকে নিজ নিজ ভূমিকা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে এবং জাতীয় পর্যায়ের অংশীদারদের দায়িত্ব নিতে হবে— যাতে সুপারিশগুলো কার্যকর পদক্ষেপে পরিণত হয়। নগর পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, তাপদাহ মোকাবিলায় আমাদের নগর পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে হবে — কম কংক্রিট, বেশি সবুজায়ন, কার্যকর গণপরিবহন, ছাদ বাগান এবং ভূমি-ব্যবহার পরিকল্পনার কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সিটি করপোরেশনগুলো ইতোমধ্যে ব্যাপক সবুজায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে, তবে এ উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত করা প্রয়োজন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জলবায়ু সহনশীলতার সঙ্গে সুশাসন ও নাগরিক আচরণের পরিবর্তনের সম্পর্কের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, গঠনমূলক সংস্কারের পাশাপাশি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও দরকার। ছোট ছোট পদক্ষেপ, যেমন- অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানো বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সবুজ নগর মানেই সুস্থ জীবন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান; জাঁ পেসমে, ডিভিশনাল ডিরেক্টর, বাংলাদেশ ও ভুটান, বিশ্বব্যাংক এবং ড. ফেং ঝাও, প্র্যাকটিস ম্যানেজার, সাউথ এশিয়া হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্র্যাকটিস। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ইফফাত মাহমুদ এবং সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ওয়ামেক এ. রাজা।
ওজোনস্তর রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য: এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদফতরে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ওজোনস্তর রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য। পরিবেশ উপদেষ্ট বলেন, ওজোনস্তর ক্ষয়ের ফলে মানবস্বাস্থ্য, কৃষি উৎপাদন ও প্রাণিজগৎ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তবে মন্ট্রিয়ল প্রটোকলের মতো কার্যকর আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কারণে পৃথিবী আজ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। এটি একটি দৃষ্টান্ত যে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে আন্তর্জাতিক আইনও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলো অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করায় ওজোনস্তর রক্ষায় বৈশ্বিক সাফল্য এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়ও একইভাবে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি ও সহযোগিতা অপরিহার্য। আমরা চাই, সমালোচনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপে রূপান্তরিত করা হোক। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক আচরণে পরিবর্তন আনলেই টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক এবং ইউএনডিপির প্রতিনিধি প্রমুখ । মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন মানিক। অনুষ্ঠানে বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

মন্ত্রী-এমপিদের প্লট দিতে গিয়ে রাজউক ক্ষতি করে ফেলেছে: পরিবেশ উপদেষ্টা

আপডেট সময়ঃ ০৭:০৪:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, মন্ত্রী-এমপিসহ তথাকথিত ক্ষমতাবানদের প্লট দিতে গিয়ে রাজউক ক্ষতি করে ফেলেছে। বন কেটে প্লট করা হয়েছে। যখন রাজউক ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান করে, তখন ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থে সেটির বিরোধিতা করেছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংকের ‘একটি টেকসই জীবন: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর তাপের প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, বাড়তে থাকা তাপমাত্রা এখন আর কোনো তাত্ত্বিক বিষয় নয়, বরং বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের বাস্তব অভিজ্ঞতা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি একটি বৈশ্বিক ঘটনা হলেও এর প্রভাব বাংলাদেশে অনেক বেশি তীব্র, যা আমাদের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তিনি বলেন, কেবল গবেষণা প্রতিবেদনে সীমাবদ্ধ না থেকে সুপারিশগুলোকে সময়সীমাবদ্ধ কর্মপরিকল্পনায় রূপ দিতে হবে। প্রতিটি সংস্থাকে নিজ নিজ ভূমিকা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে এবং জাতীয় পর্যায়ের অংশীদারদের দায়িত্ব নিতে হবে— যাতে সুপারিশগুলো কার্যকর পদক্ষেপে পরিণত হয়। নগর পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, তাপদাহ মোকাবিলায় আমাদের নগর পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে হবে — কম কংক্রিট, বেশি সবুজায়ন, কার্যকর গণপরিবহন, ছাদ বাগান এবং ভূমি-ব্যবহার পরিকল্পনার কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সিটি করপোরেশনগুলো ইতোমধ্যে ব্যাপক সবুজায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে, তবে এ উদ্যোগকে আরও বিস্তৃত করা প্রয়োজন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জলবায়ু সহনশীলতার সঙ্গে সুশাসন ও নাগরিক আচরণের পরিবর্তনের সম্পর্কের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, গঠনমূলক সংস্কারের পাশাপাশি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও দরকার। ছোট ছোট পদক্ষেপ, যেমন- অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানো বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সবুজ নগর মানেই সুস্থ জীবন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান; জাঁ পেসমে, ডিভিশনাল ডিরেক্টর, বাংলাদেশ ও ভুটান, বিশ্বব্যাংক এবং ড. ফেং ঝাও, প্র্যাকটিস ম্যানেজার, সাউথ এশিয়া হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্র্যাকটিস। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ইফফাত মাহমুদ এবং সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ওয়ামেক এ. রাজা।
ওজোনস্তর রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য: এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদফতরে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ওজোনস্তর রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য। পরিবেশ উপদেষ্ট বলেন, ওজোনস্তর ক্ষয়ের ফলে মানবস্বাস্থ্য, কৃষি উৎপাদন ও প্রাণিজগৎ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তবে মন্ট্রিয়ল প্রটোকলের মতো কার্যকর আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কারণে পৃথিবী আজ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। এটি একটি দৃষ্টান্ত যে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে আন্তর্জাতিক আইনও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলো অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করায় ওজোনস্তর রক্ষায় বৈশ্বিক সাফল্য এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়ও একইভাবে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি ও সহযোগিতা অপরিহার্য। আমরা চাই, সমালোচনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপে রূপান্তরিত করা হোক। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক আচরণে পরিবর্তন আনলেই টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক এবং ইউএনডিপির প্রতিনিধি প্রমুখ । মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন মানিক। অনুষ্ঠানে বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।